shariakibole.com

আল্ কোরাণ

আপনি কি ভূগোলের বইতে ইতিহাস পান ? কিংবা অঙ্কের বইতে ইংরেজী ?ও-রকম করলে সেই বিখ্যাত আবু ভাই-এর মত ফেল করতে করতে স্কুলের এক ক্লাসেই জিন্দেগি কেটে যাবে, কলেজের মুখ আর দেখতে হবে না। ডাক্তারি কেতাবে অর্থনীতি খুঁজলে অনর্থ হবেই, অঙ্কের কেতাব থেকে রন্ধনপ্রণালী শিখলে জগাখিচুড়ি ছাড়া উপায় নেই। ইতিহাস বইতে কোন প্রাচীন গোত্রের অর্থনীতির বিবরণ থাকতে পারে কিন্তু তাতে সেটা অর্থনীতির বই হয়ে যায় না, বরং সেটা ওই ইতিহাসকেই প্রতিষ্ঠিত করে। কোরাণ আসলে কিসের কেতাব ? কোরাণে ইতিহাস আছে কিন্তু কোরাণ তো মূলতঃ ইতিহাসের কেতাব নয় ! কোরাণে ভূতত্ত্ব আছে কিন্তু কোরাণ মূলতঃ ভূগোলের কেতাব নয় ! কোরাণে গ্রহ-নক্ষত্র ও কাব্য আছে কিন্তু কোরাণ মূলতঃ নক্ষত্র-বিজ্ঞান বা কবিতার কেতাব নয়। এই একই হিসেবে কোরাণে কিছু সামাজিক আইনও আছে কিন্তু কোরাণ মূলতঃ আইনের বইও নয়। তাহলে কোরাণ কিসের কেতাব ? জবাবটা দিয়েছে খোদ কোরাণ নিজেই। সেই সাথে চলুন এটাও দেখি শারিয়াপন্থীরা কিভাবে কোরাণের নিজের সংজ্ঞাকে বিচার করেন। তাঁদের সুউচ্চ দার্শনিক নেতা মওলানা মওদুদি তাঁর বিশাল কেতাব তাফহিমুল কুরাণে প্রতিটি আয়াত ধরে ধরে কোরাণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এখন দেখা যাক এই অতি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলোর ব্যাপারে তিনি কি বলেছেন। বইটা পাওয়া যাবে ইণ্টারনেটেও ঃ http://www.tafheem.net/main.html

সুরা ছোয়াদ ৬৭ এবং ৮৭ − “বলুন, এটি এক মহা সুসংবাদ − এটা তো বিশ্ববাসীর জন্য এক উপদেশ মাত্র।” মওলানা মওদুদি কোনো মন্তব্য না ক’রে নিঃশব্দে পরের আয়াতে চলে গেছেন।

মুজাম্মিল ১৯ − “এটা উপদেশ। অতএব যার ইচ্ছা সে তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক।” মওলানা মওদুদি কোন মন্তব্য না করে নিঃশব্দে পরের আয়াতে চলে গেছেন।

মুদাস্সির ৫৪ − “এটা তো উপদেশ মাত্র।” মওলানা মওদুদি কোন মন্তব্য না করে নিঃশব্দে পরের আয়াতে চলে গেছেন।

আশ শুরা ৫২ − “আপনি জানতেন না কোরাণ কি ও ইমান কি। কিন্তু আমি একে করেছি নূর।” মওলানা মওদুদি কোন মন্তব্য না করে নিঃশব্দে পরের আয়াতে চলে গেছেন।

সুরা ইমরাণ ১৮৪ − কোরাণ হলো “মুনীর” অর্থাৎ “আলোকিত কিতাব।” মওলানা মওদুদি কোন মন্তব্য না করে নিঃশব্দে পরের আয়াতে চলে গেছেন।

সুরা আনাম ৯০ − “এটি বিশ্বের জন্য উপদেশ মাত্র।” মওলানা মওদুদি কোনো মন্তব্য না করে নিঃশব্দে পরের আয়াতে চলে গেছেন।

সুরা আল্ ফুরকান ১ − “পরম করুণাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন।” মওদুদি বলেছেন আলাহ কোরাণ নাজিল করেছেন যাতে পয়গম্বর মানবজাতিকে উপদেশ দিতে পারেন − (so that he may admonish all mankind)। অর্থাৎ কোরাণ হল উপদেশেরই কেতাব।

সুরা হিজর ৯ − “আমি এই উপদেশগ্রন্থ নাজিল করেছি।” মওদুদি এখানে বলেছেন কোরাণ হল আলাহ’র “বাণী” (Word)।

সুরা হজ্ব ৮ − কোরাণ হল “আলোকিত কিতাব।” মওদুদি এখানে বলেছেন আলোকিত কেতাব হল বেহেশতি উৎস থেকে পাওয়া তথ্য। কিসের তথ্য তা তিনি বলেননি।

আল্ যুমার ২৩ − “আলাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাজিল করেছেন যা সামঞ্জস্যপূর্ণ।” মওদুদি নিজেও ইংরেজি তরজমা করেছেন This is Allah’s guidance অর্থাৎ “নৈতিক পথনির্দেশ।”

সুরা আবাসা ১১ − “এটা উপদেশবাণী”। মওদুদি বলেছেন “The allusion is to the Qur’an”, অর্থাৎ “ইহা কোরাণ সম্বন্ধেই বলা হইয়াছে।” অর্থাৎ তিনি স্বীকার করেছেন কোরাণ হলো উপদেশবাণী।

অর্থাৎ মওদুদির মত নেতাও এই অতি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলোকে হয় নিঃশব্দে পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন, অথবা সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছেন, নয়ত এমন ব্যাখ্যা করেছেন যা বিষয়ের সাথে মেলে না − কিন্তু বিরোধীতা কোথাও করতে পারেননি।

এই হলো সহজ সরল কোরাণ। এর বিপরীতে সারা কোরাণে এ-রকম সুস্পষ্ট কোনই আয়াতে নেই কোরাণ সামাজিক আইন বা রাষ্ট্র বানানোর কেতাব ! উপদেশ বা সুসংবাদ জোর করে চাপানোর জিনিস নয়। সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক সামরিক ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্র তার আইন জোর করে নাগরিকদের ওপরে চাপায় বলে সেটা আর লা ইকরাহা ফিদ্বীন (ধর্মে জোর জবরদস্তি নেই) থাকে না। কোরাণ যদি রাষ্ট্রীয় আইনের বই হত তবে এতে হাজার হাজার আইন থাকত যা জীবনে দরকার। অথচ কোরাণে সামাজিক আইন আছে মাত্র পাঁচ-সাতটা। এ পাঁচ-সাতটা ঘটনা বাস্তবে ঘটেছিল বলেই আইনগুলো এসেছিল। যে অপরাধ তখন ঘটেনি অথচ পরে ঘটেছে সে সম্বন্ধে কোরাণ নীরব। এমনকি কোরাণের শেষ আয়াতগুলো যেখানে কোরাণ বলেছে ইসলামই হল আলাহ্’র মনোনীত ধর্ম, সে আয়াতগুলোতেও কোনো রাষ্ট্রীয় আইনের কথা নেই, আছে শুধু উপদেশ আর মূল্যবোধের নির্দেশ। কোরাণ কিসের কেতাব তা বলেছেন স্বয়ং নবীজী ঃ “ইহা আলাহ’র কেতাব যাহাতে রহিয়াছে নূর ও সঠিক পথনির্দেশ” − সহি মুসলিম হাদিস ৫৯২০। একই কথা বলেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম বুখারী ঃ “কোরাণ কোন আইনের কেতাব নহে” − এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা − ১৯৮৩। এ-কথা বলার সাথে সাথে খলীফা তাঁকে জনগণ থেকে সরিয়ে সমরখন্দে নির্বাসনে পাঠান, সেখানেই তিনি মারা যান। এখন দেখা যাক ইসলাম কি আর মুসলিম কে ॥