shariakibole.com

নারীর মুসলমানি

মন শক্ত করে নিন, এবারে এক ভয়ঙ্কর জায়গায় নিয়ে যাব আপনাদের, ওটার সাথে ইসলামের নাম জড়ানো আছে। এক সতিদাহ ছাড়া ধর্মের নামে এত সর্বগ্রাসী, এত ভয়ঙ্কর নারী-অত্যাচার মানুষের ইতিহাসে নেই, সংখ্যায়ও সতিদাহ এত বেশি নয়। সরাসরি শোনা যাক ইউরোপ-আমেরিকার “ফ্যাশন জগতের বিস্ময়কর মহিলা” বিখ্যাত ফ্যাশন মডেল ওয়ারিস ডিরি’র মুখ থেকে তাঁর ছোটবেলার স্মৃতি (বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত ম্যাগাজিন রিডার্স ডাইজেস্ট আগস্ট, ১৯৯৯)। আফ্রিকান মহিলা ওয়ারিস ডিরি এখন ইউরোপে বাস করেন এবং বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থায় এ-বিষয়ের ওপর কাজ করেন। তাঁর ছোটবেলার মর্মান্তিক কাহিনীর সারাংশ দিচ্ছি।

সারাংশ ঃ

“চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। আমি আমার ছোট্ট কম্বলটি লইয়া মায়ের পিছুপিছু চলিলাম ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঢুকিয়া মাটিতে বসিলাম। মা বলিলেন, ‘আমরা এখানে অপেক্ষা করিব’। একটু পরেই আমি এক জিপসি নারীর চপ্পলের আওয়াজ শুনিলাম। মা একটি সমতল পাথর দেখাইয়া বলিলেন, ‘উহার উপর বসো’। মা আমাকে বসাইয়া আমার পিছনে বসিয়া তাঁহার বুকে আমার মাথা চাপিয়া ধরিলেন। আমি হাত দিয়া তাঁহার উরু জড়াইয়া ধরিলাম। তিনি একটি শক্ত শিকড় আমার দাঁতের মধ্যে ধরাইয়া দিলেন। আতঙ্কে আমার শরীর হিম হইয়া গেল। জিপসি মহিলাটি একটি ভাঙ্গা রেজর-বেড বাহির করিল। আমি উহাতে শুকনো রক্ত দেখিতে পাইলাম। সে উহাতে থুতু ফেলিয়া কাপড় দিয়া ঘষিয়া পরিষ্কার করিল। মা আমার চোখের উপর কাপড় দিয়া বাঁধিয়া দিলেন। তারপর আমি অনুভব করিলাম আমার মাংস কাটা হইতেছে। আমার চামড়ার ভিতরে বেডটির খস খস শব্দ শুনিতে পাইলাম। সেই ব্যথা বর্ণনা করার ভাষা নাই। আমার পা ছটফট করিতে লাগিল, আমি অজ্ঞান হইয়া গেলাম।

জ্ঞান ফিরিলে আমি দেখিলাম জিপসি মহিলাটি আকাসিয়া গাছের অনেকগুলি কাঁটা জড়ো করিয়াছে। সেগুলি সে আমার চামড়ায় ফুটাইয়া দিল, তারপর একটি শক্ত সুতো দিয়া সেলাই করিতে লাগিল। সেই ব্যথা এত বেশি ছিল যে আমি মরিয়া যাইতে চাহিতেছিলাম। আমার দুই পা পরস্পরের সাথে বাঁধা ছিল, তাই আমি নড়িতে পারিতেছিলাম না। পাথরটি এমনভাবে রক্তে ভাসিয়া গিয়াছিল যে মনে হইতেছিল উহাতে কোন পশুকে জবাই করা হইয়াছে। উহাতে আমার শরীরের মাংসখণ্ড লাগিয়া ছিল। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলিয়া দেখিলাম সেই মহিলা চলিয়া গিয়াছে। গাছের নীচে একটি ঘর বানানো হইয়াছিল, সেখানে আমাকে একাকী কয়েক সপ্তাহ থাকিতে হইবে। মা এবং আমার বোন আনাম আমাকে টানিয়া সেই ঝোপের ভিতরে লইয়া গেল।

শুধুমাত্র ম্যাচকাঠির সমান একটি ছিদ্র রাখা হইয়াছিল। কয়েক ঘণ্টা পরে প্রস্রাবের প্র ম বিন্দুতে আমার মনে হইল শরীরে অ্যাসিড লাগিয়া গিয়াছে। কয়েক দিনের মধ্যে আমার ইন্ফেক্শন হইয়া প্রবল জ্বর হইল। আমি বারবার অজ্ঞান হইতেছিলাম ও জ্ঞান ফিরিয়া পাইতেছিলাম। দুই সপ্তাহ ধরিয়া মা আমাকে খাবার ও পানি আনিয়া দিলেন। বহু বালিকা অপেক্ষা অনেক আমি ভাগ্যবতী। তাহারা অবিরত রক্তক্ষরণে, ইন্ফেক্শনে, টিটেনাস কিংবা শারীরিক ও মানসিক আঘাতে মরিয়া যায়। সারাজীবনে আমার স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ছাড়াও যৌবনের আনন্দ আমি কোনদিনই পাই নাই।”

শেষ হল ওয়ারিস ডিরি’র দুঃসহ কাহিনী। আমিও লিখলাম, আপনিও পড়লেন। কিন্তু লেখা দিয়ে কি কষ্ট সম্পূর্ণভাবে বুঝানো যায় ? পড়ে কি কষ্ট সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা যায় ? আপনি যতক্ষণ ধরে এটা পড়লেন, ততক্ষণে ওদিকে কতজন মুসলিম বালিকা এই মর্মান্তিক কষ্ট ও দুর্ভাগ্যের শিকার হল ? ধরে নিন আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বালিকারা। সূর্য ওঠার সাথে সাথে এক একটি বালিকাকে টেনেহিঁচড়ে কোরবাণীর পশুর মত ধরেবেঁধে চলল এই কাটাছেঁড়া ও সেলাই। সারাদিন গেল, সন্ধ্যা হয়ে সারারাত গিয়ে সূর্য ওঠা পর্যন্ত ছয় হাজার (বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান ১৯৯৯ − এখন নিশ্চয় আরো অনেক বেশি)। এটা ব্যাপকভাবে করা হয় আফ্রিকার বিস্তীর্ণ মুসলিম সমাজে, কোনো কোনো দেশে শতকরা ৯৮% নারী এর শিকার হন। ওখানকার শারিয়াপন্থীরা বলেন এটা ইসলামি। কেউ তার প্রতিবাদ করলে তাঁরা বলেন মুরতাদ, কতল করতে হবে। বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে ওয়ারিস ডিরি এটা উচ্ছেদের কাজ করছেন। তিনিও বলেছেন ওখানকার শারিয়াপন্থীরা তাঁকে পেলে কেটে ফেলবে।

এই হল অবস্থা !

যাহোক, পদ্ধতিটার নাম ‘নারীর মুসলমানি’। বিভিনড়ব ধর্মের নামে যত বিধানে নারীরা ধ্বংস হয়েছেন তার মধ্যে এক ভয়ঙ্কর এই বিধান। কারণ আর কোন বিধান এত দীর্ঘদিন ধরে সুবিশাল এক ধর্মীয় গোত্রের প্রায় প্রত্যেকটি নারীর যৌবনকে সারাজীবনের জন্য ধ্বংস করেনি। সোমালিয়ায় ৯৮% নারী এর শিকার হন। পুরুষের মুসলমানির মত এটা শুধু চামড়া কাটা নয়, এ হল ফুসফুসের মত, কিডনীর মত শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল অঙ্গ কাটা যার ওপর যৌবনের বৈধ আনন্দ নির্ভর করে। সেজন্যই ওয়ারিস ডিরি বলেছেন − “যৌবনের আনন্দ আমি কোনদিনই পাই নাই।” ওটা চেঁছে-কেটে সম্পূর্ণটাই তুলে নেয়া হয় বলেই এর রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে চায় না। বাবা-মা ভাই-বোনের চোখের সামনে বহু বালিকা ক্রমাগত রক্তক্ষরণে ছটফট করতে করতে মারা যায়। বিশ্বের মানবাধিকার ও নারী-সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে সোচ্চার চিরকালই। আশ্চর্য এই যে, বিশ্বময় মুসলমান নেতারা এটা জানার পরেও ইসলামের নামেই কোটি মুসলিম

নারীর ওপরে এই নিঃশব্দ অত্যাচার ঘটে চলেছে প্রত্যেকটি দিন, এবং ঘটে চলেছে হাজার বছর ধরে। তা-ও আবার মুসলিম-বিশ্বের কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যের নাকের ডগায়।

এবারে আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের দিকে তাকাব।

  1. সারা উত্তর-আফ্রিকায় এবং বিচ্ছিনড়বভাবে অন্যান্য মুসলিম সমাজে এটা ইসলামি হিসেবেই প্রবলভাবে পালন করা হয়েছে চিরকাল। ওখানকার নারীদেরও এটাকে ইসলামি বলে বিশ্বাস করানো হয়েছে।
  2. অনেক মুসলিম বিশেষজ্ঞ এটাকে অনৈসলামিক বলে এর প্রতিবাদ করেছেন চিরকাল।
  3. ২০০৬ সালে মুসলিম নেতারা একযোগে এটা অনৈসলামিক বলে ঘোষণা করেছেন মিশরের কনফারেন্সে।
  4. ইরিত্রিয়ায় ২০০৬ সালে এবং মিশরে ২০০৮ সালে এটাকে অপরাধের পর্যায়ে ফেলে আইন পাস হয়েছে। খুব সম্ভব তিউনিসিয়া-মরক্কো-সিনেগাল-কেনিয়াতেও এ-আইন আছে।

খেয়াল করুন, ওখানকার নারী-পুরুষ-মওলানারা একে দৃঢ়ভাবে ইসলামি বলে বিশ্বাস করলেও আসলে এটা ইসলামি নয়। ওই একই হিসেবে আমাদের অনেক দৃঢ় ইসলামি বিশ্বাসও প্রকৃতপক্ষে ইসলামি নয়। এ-বইতে দলিল দিয়ে দেখানো হয়েছে আমাদের কি কি বিশ্বাস প্রকৃতপক্ষে ইসলামি নয়, এবং কেন নয়। স্বার্থের জন্য কিছু শক্তিশালী মানুষ অতীতে ওসব বিশ্বাস পরিকল্পনা করে তৈরি করে জনগণের মাথায় ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে এবং ওই স্বার্থের জন্যই বর্তমানের কিছু শক্তিশালী মানুষ এখনও তা রক্ষা করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা বোঝে না। মনে-মাথায় একবার ইসলামি বলে বসে গেলে কেউ আর তা ছাড়ে না, বরং কেউ ছাড়তে বললে তাকে তেড়ে মারতে আসে। সব ধর্মের ক্ষেত্রেই কথাটা কঠিন সত্য।

আরও খেয়াল করুন, শারিয়ার বিশ্ব-নেতারা একে অবৈধ ঘোষণা করেই ক্ষান্ত দিয়েছেন, মাঠ-পর্যায়ে কোন বাস্তব কর্মপন্থা হাতে নেননি। ঠিক যেমন ফতোয়ার আদালতে ধর্ষিতা নারী বা বালিকার বেত্রাঘাতের শাস্তি দেখলে আমাদের কোন কোন শারিয়াপন্থী ‘ইসলামে নেই’ বলেই ক্ষান্ত দেন, বাস্তবে কিছুই করেন না। এটা একধরনের আত্মপ্রতারণা এবং অত্যাচারিতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। অথচ তাঁদের কর্মকাণ্ডের ওপরে ইসলামের উপকারিতা ও ভাবমূর্তি অনেকটাই নির্ভর করে। অবৈধ ঘোষণা এবং আইন পাশ করার পরেও আফ্রিকায় এটা মোটেই কমেনি, বন্ধ তো হয়ইনি। ধর্মের নামে কোন প্রা একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে ঘোষণা বা আইন দিয়ে তা বন্ধ করা যায় না কারণ মানুষ ওটা মেনে চলার মধ্যে সওয়াব আছে মনে করে এবং স্রষ্টাকে লঙ্ঘন করতে ভয় পায়। তাই ওই ধর্ম থেকেই এর বিরুদ্ধে সূত্র ও যুক্তি তুলে এনে মাঠ-পর্যায়ে ও সরকার-পর্যায়ে কাজ করতে হয়, গণচেতনা সৃষ্টি

করতে হয়। ভারতে সতিদাহ-প্রা বন্ধ বা বিধবা-বিবাহ চালু করার ক্ষেত্রেও আমরা এ-পদ্ধতিই দেখি। মুসলিম নেতারা যা করেননি কিন্তু না-করা পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না, তা হলো এ-প্রার শেকড়কে ইসলামি পদ্ধতিতেই বাতিল করা। অথচ বাতিল তো দূরের কথা, নেতারা সেই শেকড়ের উলেখ পর্যন্ত করেননি। অনেক নেতা ফস্ক রে বলে ফেলেন কোরাণ-হাদিসে এর সমর্থন নেই। কথাটা মোটেই সত্যি নয়। কোরাণে এটা নেই বটে কিন্তু হাদিস ও শারিয়া আইনে অবশ্যই আছে, নাহলে একুপ্রা এত দীর্ঘদিন চলতে পারত না।

  1. “পুরুষ ও নারীর জন্য মুসলমানি বাধ্যতামূলক” − শাফি’ আইন নং ব.৪.৩। এখানে স্পষ্টই নারী বলা আছে।
  2. “বৈধ কারণে কেহ মুসলমানি না করিলে তাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।” − হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ৩৬৩। অর্থাৎ কেউ বৈধ কারণ ছাড়া মুসলমানি না করলে শারিয়া-আদালতে সাক্ষী হতে পারবে না। এখানে নারী-পুরুষের কথা বলা হয়নি, তাই এটা নারী-পুরুষ দু’জনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বৈধ কারণ হিসেবে বলা আছে − “বৃদ্ধ বয়স (সম্ভবত বৃদ্ধ বয়সে ইসলাম গ্রহণ করলে − লেখক)
  3. ও অন্যান্য যথেষ্ট কারণ।” ইমাম ইবনে হাজার হায়তামি’র দেয়া ৪৪২টি ইসলাম-বিরোধী কাজের একটা তালিকা আছে, এর ৩৬৮ নম্বরে আছে ঃ “বয়স্ক হইবার পরেও মুসলমানি না করা” − শাফি’ আইনের কেতাব “উমদাত আল্ সালিক” পৃষ্ঠা ৯৮৬। অর্থাৎ, বয়স্ক হবার পরেও মুসলমানি না করলে তা ইসলাম-বিরোধী হবে এবং নারীপুরুে ষর উলেখ না থাকায় সবাইকেই এর আওতায় ধরতে হবে।
  4. “আবু হুরায়রা বলিয়াছেন ঃ আমি রসুল (সাঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি ‘পাঁচটি কাজ স্বভাবের বৈশিষ্ট্য (অর্থাৎ, স্বাভাবিক − লেখক), মুসলমানি, যৌনকেশ অপসারণ, মোচ ছোট করিয়া কাটা, নখ কাটা এবং বগলের পশম কাটা’” − মুহসিন খানের অনুদিত সহি বুখারী, ৭ম খণ্ড হাদিস নং ৭৭৯। এখানে নারী-পুরুষের উলেখ নেই।
  5. “মদিনায় এক মহিলা মুসলমানি করিত। রসুল (সাঃ) তাহাকে বলিলেন − ‘গভীর করিয়া (severely) কাটিয়ো না কারণ ইহা নারীর জন্য ভাল ও স্বামীর জন্য আকাক্সিক্ষত’” − সহি আবু দাউদ হাদিস নং ৫২৫১। হাদিসের ভাষা থেকেই বুঝা যায় সেই মহিলা নারীর মুসলমানি করত।

এছাড়াও সহি বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ৫৭৫, ৫৭৬ ; সহি মুসলিম ৩য় খণ্ড হাদিস ৬৮৪, সহি ইবনে মাজাহ ১ম খণ্ড হাদিস ৬০৮ এবং সহি তিরমিজি হাদিস ১৬৬-তে নারীর মুসলমানি’র উলেখ ও পরোক্ষ সমর্থন আছে। শাফি আইনের অনুবাদক ব্র্যাকেটে নিজের থেকে যোগ করেছেন “হাম্বলি মতে নারী-মুসলমানি বাধ্যতামূলক

নহে বরং সুনড়বত, হানাফি মতে ইহা স্বামীর প্রতি সৌজন্য”। স্বভাবতই এ-সব সূত্রের ভিত্তিতে ওখানকার মওলানারা নারী-মুসলমানিকে ইসলামে বাধ্যতামূলক মনে করেন। সে-জন্যই “খৎনার সময় তারা আবৃত্তি করতে থাকে, ‘আলা মহান, মুহম্মদ তার নবী ঃ আলা আমাদের দূরে রাখুক সমস্ত পাপ থেকে” − ডঃ হুমায়ুন আজাদের “নারী” পৃষ্ঠা ১৯৭ থেকে নওঅল (১৯৮০, ৩৩-৪৩) ও মাইল্স (১৯৮৮, ৮৮- ৯০)। এর বিরোধীতা করার কারণেই ওখানকার মওলানাদের অনেকে আমাদেরকে মুরতাদ মনে করেন এবং আমাদেরকে খুন পর্যন্ত করার জন্য তৈরি। দু-দু’টো শারিয়া আইন, একটি তথাকথিত “ইসলাম-বিরোধী কাজের তালিকা” ও সাতটা সহি হাদিসের এ-সব শক্তিশালী সূত্রের সামনে মিশরের ইসলামি কনফারেন্সের ঘোষণা বাঁশপাতার মত উড়ে যায়। সরকারেরও সাধ্য নেই দূর মফস্বলের গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় মওলানাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কোটি কোটি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা যে জনগণ নিজেরাই একে ইসলামি মনে করে। আইন বা পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে পরাস্ত করার ব্যাপারও এটা নয়, এটা জনগণের ধর্মীয় আবেগ যা রাষ্ট্র, আইন বা পুলিশমিলিটারির চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী। কাজেই আমাদের মুসলিম নেতাদের সর্বপ্রম কাজ হল এ-সূত্রগুলো কেন ইসলামি নয় তা ঐ কোরাণ-হাদিস থেকেই প্রমাণ করা। এটা সম্ভব, একটা প্রমাণ দিচ্ছি। ওপরের আবু দাউদ থেকে দেখানো হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ শারিয়া-নেতা ডঃ ইউসুফ কারজাভী বলেছেনঃ “এই সকল হাদিস নির্ভরযোগ্য বলিয়া কোন প্রমাণ নেই” − সূত্র বিশ্বের বৃহত্তম শারিয়া-ওয়েবসাইট ‘ইসলাম অন্ লাইন’ ঃ

http://www.islamonline.net/servlet/Satellite?pagename=IslamOnline-English-Ask_Scholar/FatwaE/FatwaE&cid=1119503543886

তারপর দরকার বিশ্বময় আন্দোলন গড়ে তোলা। এ-ছাড়াও প্রয়োজন স্থানীয় মওলানাদের সাথে আলোচনায় বসা, স্থানীয় সরকারগুলোর সহায়তায় (এ সহায়তা আছে) স্থানীয় রেডিও-টিভি-সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে জনগণকে বুঝানো কেন এ-প্রা ইসলাম-বিরোধী। সেই সাথে এ-সত্যটাও জানানো যে এ-কুপ্রা প্রাচীন ইউরোপে ছিল, সেখান থেকেই এটা আফ্রিকায় ঢুকেছে। সেজন্যই অন্য মহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে এটা বিরল। মনে রাখতে হবে, একটা দিন দেরি মানে আরো কয়েক হাজার মুসলিম নারীর জীবন ধ্বংস। সেজন্যই আল্ আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলার শেখ তানতাওয়ি এ-প্রাকে অনৈসলামিক বলেছেন।

দুঃখকষ্ট বেঁটে নিলে নাকি অর্ধেক হয়। তাই এবারে আপনাদের সাথে বড় একটা দুঃখ বেঁটে নিচ্ছি। উদ্ধৃতি দিচ্ছি বিশ্বের নাম-করা শারিয়া-উৎস থেকেই ঃ

১। শেখ ইউসুফ আল্ কারজাভী বলিয়াছেন − “ইহা (নারী-মুসলমানি) বাধ্যতামূলক নহে। কেহ যদি মনে করে ইহাতে তাহার কন্যার মঙ্গল হইবে তবে ইহা করা উচিত। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি ইহা (নারী-মুসলমানি − লেখক) সমর্থন করি।” ইসলাম অন্ লাইন ঃ

http://www.islamonline.net/servlet/Satellite?pagename=IslamOnline-English-Ask_Scholar/FatwaE/FatwaE&cid=1119503543886

কি-ঈ ? নারী-মুসলমানির মত ভয়াল হিংস্রতাকে “বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি সমর্থন করি” ?? এ-দুঃখ রাখব কোথায় ?

২। আমাদের শারিয়াপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মত মিশরেও আছে ইখওয়ানুল মুসলেমীন, মুসলিম ব্রাদারহুড নামে বিখ্যাত। ওরাও ওখানে শারিয়া-ভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। মিশর-সরকার বহু আগে ওদের বেআইনি ঘোষণা করলে ওরা তখন থেকেই স্বতন্ত্র হিসেবে রাজনীতি করছে। বাংলাদেশের শারিয়াপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মত গত নির্বাচনেও ওদের বেশ ক’জন সাংসদ হয়েছে। ১৪ই জুন ২০০৮ তারিখে মিশর সরকার যখন নারী-মুসলমানিকে অপরাধ হিসেবে আইন পাশ করেছে এবং এ-অপরাধের শাস্তিও রেখেছে, তখন ওরা কি করেছে দেখুন ঃ “মুসলিম ব্রাদারহুডের তীব্র বাধার মুখে এই আইন পাশ হয়…মুসলিম ব্রাদারহুডের সাংসদেরা বারাবার দাবি করে যে এই আইন ইসলামি শারিয়ার পরিপন্থী এবং পশ্চিমা মতলবের স্বার্থ রক্ষা করে…নারী-মুসলমানিকে বেআইনি করার অর্থ পাপকে উৎসাহিত করা…তাহাদের (পশ্চিমা দেশের − লেখক) অনৈসলামিক অ্যাজেণ্ডা মিশরে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান হইতে NCMC প্রচুর ডলার পাইয়াছে” − মিশরের সর্বাধিক প্রচারিত ইসলামি সাপ্তাহিক আল্ আহরাম। NCMC হল National Council for Motherhood and Childhood যার প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ-আইন পাশ হয়।

কি-ঈ ? নারী-মুসলমানির মত বর্বর নিষ্ঠুরতাকে বেআইনি করার অর্থ পাপকে উৎসাহিত করা ?? এ-দুঃখ রাখব কোথায় ?

এবারে “পাকিস্তানের শারিয়া − বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ?” অধ্যায়ে দেখে নিন তথাকথিত আলা’র আইন ঃ “পরকীয়া ও ধর্ষণের প্রমাণ হইবে (ক) অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি, অথবা

(খ) চারজন বয়স্ক পুরুষ মুসলমানের চাক্ষুষ সাক্ষ্য” − হুদুদ আইন নং ৭ (১৯৭৯), নং ২০ (১৯৮০) দ্বারা সংশোধিত, ৮-এর খ।” ২০০৬ সালে সংসদে এ-আইন বাতিলের প্রস্তাব উঠলে শারিয়াপন্থী রাজনৈতিক দল ক্ষিপ্ত হয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন ও সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়ে বলেছে “শারিয়া মোতাবেক এই আইনই সঠিক, এর

কোনরকম পরিবর্তন কোরাণ ও শারিয়ার খেলাফ। এ-পরিবর্তন দেশকে অবাধ যৌনতার স্বর্গ বানাবে।”

কি-ঈ ? ধর্ষণের প্রমাণ চারজন বয়স্ক পুরুষ মুসলমানের চাক্ষুষ সাক্ষ্য ? এ-আইন পরিবর্তন করলে দেশ যৌনতার স্বর্গ হবে ? এ-দুঃখ রাখব কোথায় ?

শারিয়া-নেতারা মুখে যা-ই বলুন তাঁদের নিজেদেরই বাস্তব কর্মকাণ্ড তাঁদের চরিত্র অনৈসলামিক প্রমাণ করছে।

বিশ্ব-মুসলিম আর কতকাল এই চরিত্রের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবে ?