প্রথমেই মন দিয়ে পড়ে নিন সহি বুখারী ডঃ মুহসিন খানের অনুদিত, ৭ম খণ্ড হাদিস ২০৬ কিংবা সহি বুখারী হাদিস নং ২৪৭৭ (হাফেজ আবদুল জলিল) : “এখনও আমার চোখের সামনে ভাসিতেছে যে, বরীরার স্বামী মুগীস কাঁদিতেছে এবং তাহার পিছুপিছু ছুটিতেছে। চোখের পানিতে তাহার দাড়ি ভিজিয়া গেল। এই দৃশ্য দেখিয়া নবী করীম (দঃ) বলিলেন, ‘হে আব্বাস ! বরীরার প্রতি মুগীসের ভালবাসা আর মুগীসের প্রতি বরীরার উপেক্ষা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক !’ তিনি বরীরাকে বলিলেন, ‘তুমি যদি মুগীসকে পুনরায় গ্রহণ করিতে !’ সে বলিল, ‘ইয়া রসুলুলাহ ! ইহা কি আপনার নির্দেশ ?’ তিনি বলিলেন, ‘আমি ইহা সুপারিশ করিতেছি।’ বরীরা বলিল, ‘মুগীসের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নাই’।”
কি মনে হয় ? মুগীস বরীরাকে এতটাই ভালবাসত যে সে “কাঁদিতেছে এবং তাহার পিছুপিছূ ছুটিতেছে, চোখের পানিতে তাহার দাড়ি ভিজিয়া গেল”। – ভালবাসার পরেও “মুগীসের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নাই” মানেই হল বরীরা মুগীসের সাথে সংসার করবে না, তাই না ? নবীজী হৃষ্টচিত্তে তাকে তদবস্থায়ই থাকতে দিলেন, দেখুন মুহিউদ্দনের অনুদিত কোরাণ, পৃষ্ঠা ২৭১ :- “বরীরা আরজ করলেন : ইয়া রসুলুলাহ ! এটি আপনার নির্দেশ হলে শিরোধার্য, পক্ষান্তরে সুপারিশ হলে আমার মন তাতে সম্মত নয়। রসুলুলাহ (সাঃ) বললেন : নির্দেশ নয়, সুপারিশই। বরীরা জানতেন যে, রসুলুলাহ (সাঃ) নীতির বাইরে অসন্তুষ্ট হবেন না। তাই পরিষ্কার ভাষায় আরজ করলেন : তাহলে এ সুপারিশ আমি গ্রহণ করব না। রসুলুলাহ (সাঃ) হৃষ্টচিত্তে তাকে তদবস্থায়ই থাকতে দিলেন।”
কি মনে হয় ? নবীজী কি বরীরাকে বাধ্য করেছিলেন মুগীসের ঘর করতে ? না, করেননি। কারণ নারী কার সাথে সংসার করবে সে-ব্যাপারে পুরুষের মত নারীর ইচ্ছেঅনিচ্ছেইই চূড়ান্ত। স্ত্রী’র নিজের তরফ থেকে তালাক দেবার অধিকার ছড়িয়ে আছে কোরাণ থেকে নবীজী হয়ে সাহাবী পর্যন্ত, উম্মুল মু’মেনীন (নবীজী’র স্ত্রী-গণ) থেকে সাহাবী-নারী পর্যন্ত। সূত্রগুলো দেখুন এবং নিজের বিবেককে প্রশড়ব করুন : Narrated Aisha: Allah’s Apostle gave us the option and we selected Allah and His Apostle. So, giving us that option was not regarded as divorce − সহি বুখারী − মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মুহসিন খান অনুদিত, ৭ম খণ্ড হাদিস ১৮৮ (কিছু অনুবাদক ব্র্যাকেটে নিজের কথা ঢুকিয়ে দিয়েছেন (to remain with him or to be divorced) এবং (to be divorced), ওগুলো বাদ দিচ্ছি)।
এ হাদিস আছে বুখারী ৩য় খণ্ড ৬৪৮-য়েও। এর সাথে সুরা আল্ আহযাব-এর আয়াত ২৮ ও ২৯ মিলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আলাহ স্বয়ং নবী-পতড়বীদেরকে অধিকার দিয়েছিলেন নবীজীর সাথে থাকার বা তাঁকে ছেড়ে যাবার। সে অধিকার প্রয়োগ করেই তাঁরা নবীজীকে ছেড়ে যাননি। এটা তাঁদের সিদ্ধান্ত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত। এটা নিশ্চয়ই সত্যি যে নবী-পতড়বীদের সব বিষয় সবার ওপরে প্রযোজ্য নয় (দেখুন আহযাব ৩০ ইত্যাদি)। কিন্তু এই বিশেষ বিষয়টা, অর্থাৎ কোরাণের ও নবীজী’র দেয়া নারীর নিজের তরফ থেকে তালাকের অধিকার সবার ওপরে প্রযোজ্য তা হাদিসেও প্রমাণিত। কারণ “আমি তাহার প্রেমে পড়িলাম বলিয়াই তাহাকে আমার সহিত ঘর করিতে হইবে” এটা জংলী আইন হতে পারে, ইসলামের নয়। খুলে দেখুন সুরা নিসা আয়াত ১৯ − Ye are forbidden to inherit women against their will. Nor should ye treat them with harshness, that ye may take away part of the dower ye have given them, − except where they have been guilty of open lewdness − ইউসুফ আলী)। নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের উত্তরাধিকারী হওয়া নিষিদ্ধ করা হল, প্রকাশ্য অশীলতা না করা পর্যন্ত তাদের দেনমোহরের অংশ ফিরিয়ে নেয়া বা কর্কশ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হল। কি আশ্চর্য চমৎকার হুকুম কোরাণের ! এর সাথে মিলিয়ে নিন সুরা ত্বালাক ১ − প্রকাশ্য অশীলতা না করা পর্যন্ত স্ত্রীকে বহিষ্কার করা নিষিদ্ধ করা হল।
‘উত্তরাধিকারী’ শব্দটা আরবি ভাষার একটি অভিব্যক্তি মাত্র, সম্পত্তির মত দাসী-মালিকের ব্যাপার নয় – বাংলায় যেমন ‘হুক্কা-খাওয়া’র মানে হুঁকোটাকে কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলা নয়। ‘দেনমোহর’ শব্দটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে আয়াতটা স্ত্রীর ব্যাপারেই কারণ স্ত্রী ছাড়া ত্রিভুবনে আর কাউকেই দেনমোহর দেয়া যায় না। এর সমর্থন পাবেন বিশ্ববিখ্যাত শারিয়াবিদ ডঃ জামাল বাদাওয়ী (http://www.jannah.org/sisters/end/html), বহু ইসলামি বিশেষজ্ঞের দল এমনকি আমাদের প্রচণ্ড শারিয়াপন্থী ইসলামি দৈনিক ইনকিলাব-ও (০৪ জানুয়ারী ২০০৬) − “যদিও পাত্রীপক্ষের অনুরোধে একটা মোহরানা নির্ধারণ করা হয় তবে অধিকাংশ বিবাহ অনুষ্ঠানে মোহরানার একটা অংশ আদায় করা হলেও মোহরানার মোটা অংশ অনাদায়ী থেকে যায়…পাত্রীও জানে তার নির্ধারিত মোহরানা আদৌ কোনদিন তার হস্তগত হবে না, যা নিঃসন্দেহে সুরা নিসা’র ১৯ নং আয়াতের হুকুমের পরিপন্থী, অর্থাৎ হারাম কাজ।” মউদুদি বলেন, এ আয়াত নাকি এসেছে অন্য ব্যাপারে। তখন কেউ মারা গেলে তার বৌদেরকে ভাই-চাচারা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে যেতো, তাই এ-আয়াত। কিন্তু মউদুদি দেনমোহর কথাটা এড়িয়ে গেছেন, যা শুধু স্ত্রীর বেলায় খাটে। তাছাড়া, মউদুদির কথা সত্যি হলে যেসব বিধবা অন্যের উত্তরাধিকারে যেতে রাজি তারা কি তা পারবে ? নিশ্চয়ই নয় !
তাহলে ?
আর কতভাবে কতবার কোরাণকে বলতে হবে নারীর অধিকারের কথা ? আর কতবার এই হুকুম লঙ্ঘন করবে তথাকথিত আলা’র আইন − বিবাহ-বিচ্ছেদ চাইলে স্ত্রীকে ‘খুলা’ আইনের নামে স্বামী বা বিচারকের দয়ার ওপরে নির্ভর করতে হবে ? দেখুন ডঃ মুহসিন খানের অনুদিত বুখারী ৭ম খণ্ড হাদিস ১৯৯ ঃ
থাবিত বিন কায়েসের স্ত্রী রসুলের নিকট আসিয়া বলিল, ‘হে আলাহ’র রসুল ! থাবিত বিন কায়েসের চরিত্র বা দ্বীনদারীর উপর আমার কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু আমার ভয় হইতেছে আমি আলাহ’র অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিতে পারিব না’ (অর্থাৎ স্বামীর প্রতি কর্তব্যে গাফিলতি হতে পারে − হাদিস ২৪৮৩, হাফেজ আবদুল জলিল)। ইহাতে রসুল বলিলেন, ‘তুমি কি তাহার বাগানটা ফেরৎ দিতে রাজি ?’ সে বলিল, ‘হ্যাঁ।’ অতএব সে তাহাকে বাগান ফেরৎ দিল এবং রসুল (দঃ) থাবিতকে তালাক দিতে বলিলেন। (এই স্ত্রীর নাম জামিলা − হাদিস নং ২০০)।
দেখলেন ? স্বামী ভালোবাসলেও কিংবা সে দ্বীনদারী ভাল মানুষ হলেও নারী বাধ্য নয় সে সংসার করতে যা তার মন চায় না। নারীকে ইচ্ছের এই প্রাকৃতিক অধিকার দিয়েছে কোরাণ ও রসুল। শুধুমাত্র স্ত্রীর ইচ্ছের ভিত্তিতে নবীজী বিয়ে বাতিল করেছেন এর প্রমাণ আরো আছে যেমন সহি ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড ১৮৭৪।
এর পরেও শারিয়া আইন “খুল্” বানানো হয়েছে যাতে স্ত্রী তালাক চাইলে কোর্টে মামলা করতে হবে। শারিয়া আইনে আছে শারীরিক অক্ষমতা, বেশি মারপিট, খরচ না দেওয়া ইত্যাদি বিশেষ দু’একটা কারণের স্পষ্ট প্রমাণ থাকলে কাজী নিজে থেকে বিবাহ বাতিল করতে পারেন। ওসব প্রমাণ না থাকলে কোর্ট স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্বামীকে দিয়ে স্বামীর অনুমতির চেষ্টা করবে, নতুবা স্ত্রীর ইচ্ছের কোনই দাম নেই শারিয়া আইনে (বি-ই-আ ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৫৮, ধারা ৩৫৫ ; শাফি’ই আইন #হ.৫.০, হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১১২, শারিয়া দি ইসলামিক ল’ − ডঃ আবদুর রহমান ডোই, পৃঃ ১৯২)। বাস্তবে তো আমরা দেখি ওসবের প্রমাণ কত কঠিন। তাছাড়া, কোন বিচারকই তো দেবতা নন। তিনিও অজ্ঞানতার দরুণ, আবেগের কারণে বা ঘুষ খেয়ে নারীর জীবন দোজখ করতে পারেন ঃ দেখে নিন “শারিয়া, অতিতের দলিল” নিবন্ধ।
কোরাণ-রসুলের দেয়া নারীর ইচ্ছেÑঅনিচ্ছের এই ইসলামি অধিকারটা সেই কবে ডাকাতি হয়ে গেছে ! একদিকে মুখমিষ্টি কথায় আর অন্যদিকে এইসব আইনের নির্মম হিংস্রতায় অসংখ্য মুসলিম নারীর কানড়বায় ভরে আছে ইতিহাস। কে তারা, যারা কিছু জাল হাদিসের জোরে এই কোরাণ-বিরোধী অনৈসলামিক আইনে কোটি মুসলিম নারীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ? কে তারা, যার প্রতিষ্ঠা করেছে পুরুষ তালাক দেবে আর নারী তালাক নেবে, তা’ও আবার ঠিক তালাক নয়, ‘খুলা’ নেবে ?
দেখুন শারিয়া আইন ঃ এক বা দু’বার তালাক দেবার পারে “স্বামী তাহার স্ত্রীকে আবার ফিরাইয়া লইতে পারে, স্ত্রীর সম্মতি থাকুক বা না থাকুক” − (বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ৩৫২)। স্বামী এমন দেবতা কবে থেকে হল ? স্বামীকে এমন দেবত্ব থেকে নামানোই তো রসুলের বিশেষ সংগ্রাম ছিল ! অনিচ্ছার সংসার কোনদিন সুখের হয় ? ইসলামের নামে নারীর পায়ে এমন ইসলাম-বিরোধী শেকল কে পরালো ? নারী কি পুরুষের সম্পত্তি যে তার ইচ্ছে অনিচ্ছের কোন দাম নেই ? শারিয়াপন্থীরা বলেন সংসার বাঁচানোর জন্য এসব ঠিক আছে। আশ্চর্য কুযুক্তি। নারীর সম্মান আর অধিকার জবাই করে যে সংসার টিকিয়ে রাখা হয় সেটা ইসলামি সংসার হয় কি করে ? বৈষম্যের এই শেকড় কিছুশারিয়াপন্থীদের মাথায় এমনই কঠিনভাবে বসে গেছে যে তাঁরা ইসলামের নামে ইসলাম লঙ্ঘনের পদ্ধতি দেখতেই পান না। বছর দুই আগে বিবিসি খবর দিয়েছিল বাংলাদেশের জনৈক মুফতি বলেছেন − “ইসলামী আইন অনুসারে নারী তালাক চাহিলে তাহার স্বামীর নিকট তালাকের ইচ্ছা প্রকাশ করিতে পারে, কিন্তু ইহা নির্ভর করে স্বামী তাহার অনুরোধ রাখিবে কি না তাহার উপর। তালাকের আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব সরাসরি কোরাণ-বিরোধী, আমরা ইহা প্রতিরোধ করিব।”
মুফতি ওই হাদিসগুলো দেখে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারতেন তিনি আসলে প্রতিরোধ করছেন কোরাণ-রসুলকেই। অথচ এই তিনিই নারীকে কোরাণ-রসুলের দেয়া অধিকারের সমর্থন করতে পারতেন। এসবের জবাব তাঁকে খালেকের কাছে দিতে হবে একদিন, যেদিন বড্ড দেরি হয়ে যাবে। এই ‘খুলা’ আইনে অতীতবতর্মা নে অসংখ্য নারীর জীবন কিভাবে ধ্বংস হয়েছে তার কিছু দলিল দেখে নিন “শারিয়া, অতীতের দলিল” নিবন্ধে। কিছু মুসলিম আছেন যাঁরা ইণ্টারনেটের নিবন্ধে খুলা’র বিরুদ্ধে বাঘের মত হুঙ্কারে প্রচণ্ড লেখালেখি করেন কিন্তু শারিয়াপন্থীদের সামনে পড়লেই অতিশয় ভদ্র হয়ে যান।
অনেক ফকিহ্ অতীত-বর্তমানে অনেক কিছুই লিখে গেছেন, সেগুলো আমাদের ওপরে ইসলাম হিসেবে চাপিয়ে দেয়াটা কি ইসলাম ? আমরা কি সেগুলো মানতে বাধ্য ? মোটেই নয়। নিজেদের কথারই চরম বিরোধীতায় শারিয়া-জগৎ ভরে আছে। উদাহরণ দেখুন ঃ
http://www.usc.edu/schools/college/crcc/engagement/resources/texts/muslim/hadith/abuddawud/025.sat.html
Book 25, Number 3639:
Narrated Abdullah ibn Amr ibn al- As I used to write everything which I heard from the Apostle of Allah (Peace_be-upon_Him). I intended (by it) to memorise it. The Quraysh
prohibited me saying: Do you write everything that you hear from him while the Apostle of Allah (Peace_be-upon_Him) is a human being: he speaks in anger and pleasure? So I stopped writing, and mentioned it to the Apostle of Allah (Peace_be-upon_Him). He signalled with his finger to his mouth and said: Write, by Him in Whose hand my soul lies, only right comes out from it.
Book 25, Number 3640:
Al-Muttalib ibn Abdullah ibn Hantab said: Zayd ibn Thabit entered upon Mu’awiyah and asked him about a tradition. He ordered a man to write it. Zayd said: The Apostle of Allah (Peace_be-upon_Him) ordered us not to write any of his traditions. So he erased it.
অর্থাৎ প্রমটায় আমরা পাচ্ছি নবীজী আদেশ দিলেন তাঁর সুনড়বত লিখে রাখতে, ঠিক পরেরটাতেই পাচ্ছি “কোনো সুনড়বত না লিখতে।” তার মানেই হলো তাঁকে নিয়ে ভয়ানক ষড়যন্ত্র হয়েছে। যার যেখানে স্বার্থ সে সেটা মানছে এবং অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অনেকে বলেন কোন্টা ঠিক আর কোন্টা জাল তা এই চোদ্দশো বছর পরে ঠিক করা অসম্ভব। আমি বলি, তাঁর ব্যাপারে জানা সম্ভব শুধু যদি আমরা বুঝতে পারি কোন্ কথাটা নবী-রসুলের পক্ষে বলা সম্ভব আর কোন্টা নয়। যেটাতে মানাধিকার রক্ষা হয় সেটাই তাঁর নির্দেশ, সেটাই সত্যিকারের “সহি” অর্থাৎ “সত্য” হাদিস। তা না হলেই সেটা জাল। আরো দেখনু ঃ মহানবী (সাঃ) বলেন − “যে ব্যক্তি হদ্দ-বহিভূর্ত অপরাধে হদ্দের সমান শাস্তি দিল সে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” এরপরেই বলা হল “অবশ্য সাবির্ক কল্যাণের দিক বিবেচনা করিয়া আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ হদ্দের পরিমাণের অধিক শাস্তিও দিতে পারেন।” তাহলে সীমালঙ্ঘনকারীদের কি হবে ? এটা তো তাঁদেরই ‘সুনড়বত পালন’-এর খেলাফ হল, তাই না ? আর, সুরা তালাকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে তালাকের সময় দুইজন সাক্ষী রাখবে। কিন্তু এর পরেই বলা হচ্ছে ঃ “কিন্তু ফকিহ্গণের মতে তালাকদানের ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখা বাধ্যতামূলক নহে, মুস্তাহাব (উত্তম)” − বি-আ-ই ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৪৭৯ ও ২৩২। এটা তো একেবারে সরাসরি কোরাণ লঙ্ঘন হল। এভাবে কোরাণরসুে ল লঙ্ঘন করে কি সর্বনাশ এনেছেন তাঁরা আমরা তো মুসলিম-বিশ্বে দেখতেই পাচ্ছি।
আসলে তাঁরা একটা ইহুদী আইনকে আলার আইন হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন। এই ‘খুলা’ শারিয়া আইনটা এসেছে ইহুদী আইন থেকে, একে বলে “গেট”। শারিয়া আইনের মতই ওদের এ-আইনে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে কিন্তু স্ত্রী তালাক চাইলে বছরের পর বছর গীর্জায় ছুটোছুটি করতে হয়, অজস্র টাকা ঢালতে হয়, অফিস থেকে বিনা বেতনের ছুটি নিতে হয় বা চাকরি ছাড়তে হয়, স্বামীকে টাকা দিতে হয়, এমনকি বাচ্চাদেরও ভরণপোষণের টাকা ত্যাগ করতে হয়। কারণ আমাদের শারিয়া আইনের মতই ওদেরও ধর্মীয় তালাক না হলে সে স্ত্রী আবার বিয়ে করতে পারে না (স্বামী কিন্তু পারে, শারিয়া আইনের মতই)। কাজেই স্ত্রীর চেষ্টা, যাতে রাবাই সাহেব (আমাদের মওলানা বা হিন্দুদের পুরুত ঠাকুরের মত ওদের হল রাবাই) কোনমতে স্বামীর কাছ থেকে তালাকটা কিনে নিতে পারেন। স্ত্রী যতক্ষণ দেনমোহর এবং নিজের ও বাচ্চাদের কাস্টডি বা ভরণপোষণ ত্যাগ না করছে ততক্ষণ স্বামী তালাকের অনুমতি দেবে না, স্ত্রীও আবার বিয়ে করতে পারবে না, এবং ততদিনই বেচারা স্ত্রীকে ঐ অত্যাচারী স্বামীর সাথেই এক বাসায় থাকতে হবে। কখনো স্বামী এর বাইরেও কিছু উপরি কামাইয়ের ধান্ধায় আরো টাকা চেয়ে বসে, এর বাস্তব উদাহরণও আমাদের কাছে আছে। বুঝতেই পারছেন, টাকার অভাব, কোর্টে যাওয়া-আসা, কোর্ট ও উকিলের খরচ, রানড়বাবানড়বা, বাচ্চাদের দেখাশোনা, পরিবার-সমাজের কটাক্ষ-কটূক্তি ইত্যাদি মিলিয়ে এমন ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে বেচারা অসহায় স্ত্রী মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে, কোর্টে যায় না। অথচ কোরাণ-রসুল তাকে কি সুন্দর অধিকার দিয়েছিল ইচ্ছেমত সুখের সংসার করার, উকিল কোর্ট-কাচারি স্বামী বা অন্য কারো দয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার নয়। এ দুঃখ রাখবেন কোথায়, সেটা অন্য প্রশড়ব। আপাতত ঐ কোরাণ-রসুল বিরোধী শারিয়া আইনটা বাতিল ক’রে নারী-পুরুষের সমান বিবাহ-বিচ্ছেদের অধিকারের ইসলামি আইন প্রয়োগ করা জরুরি ॥